২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

কলিমুদ্দির বাসর [পর্ব-১]

-

কলিমুদ্দিকে নিয়ে তার মা-বাবার উদ্বেগ বেড়েই চলেছে। ছেলের বয়স বেড়েছে, কিন্তু বুদ্ধি বাড়েনি। পাড়া চষে বেড়ানো ছাড়া আর কোনো কাজই কলিমকে দিয়ে হয় না। চাল আনতে বললে ডাল আনে, পেঁয়াজ বললে মরিচ। এরই মধ্যে সেদিন ঘটে গেল এক বিপত্তি। বাবার সাথে কলিম রওনা দিলো নানার বাড়ি। মাঝপথে বাঁশের সাঁকো পার হতে হয়। কলিমকে জিজ্ঞেস করা হলো সে পাড় হতে পারবে কি না। উত্তরে কলিম বুক ফুলিয়ে বলল, এটা কোনো ব্যাপার হলো আব্বা? তুমি শুধু আমার পেছন পেছন আসো।
ছেলের কনফিডেন্স দেখে বাবা আর কোনো কথা না বলে সাঁকোতে উঠল। মাঝ বরাবর এসে যেই নিচের দিকে তাকাল অমনি শুরু হলো কলিমের পা কাঁপাকাঁপি। কাঁপাকাঁপি অচিরেই নাচানাচির পর্যায়ে চলে গেল। কলিম ভাঙা ভাঙা কণ্ঠে বলল, আব্বা আর পারছি না। সাঁকো ভীষণ কাঁপছে।
কলিমের বাবা রেগে গেলেন। বললেন, ওরে গর্দভ, সাঁকো কাঁপে না। তুই কাঁপছিস!
তিনি অবস্থা বেগতিক দেখে হাতে থাকা মিষ্টির প্যাকেট ফেলে দিয়ে জান বাঁচানোর লড়াইয়ে নেমে পড়লেন। কলিমকে বললেন শক্ত করে ধরে রাখতে, কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। কলিম ভীষণ চিৎকারে লবণের বস্তার মতো গোল হয়ে ধপাস করে পড়ে গেল নদীতে। পুত্রের জীবন বাঁচাতে বাবাও ঝাঁপ দিলেন পানিতে। নদীতে পানি কম থাকায় সেবারের মতো রক্ষা।
কলিম এবার বায়না ধরল সে ঢাকা যাবে। সবাই গার্মেন্টে গিয়ে টাকা ইনকাম করে, সেও টাকা ইনকাম করবে। অনেক পীড়াপীড়ির পর মা তাকে পাঁচ হাজার টাকা ধরিয়ে দিয়ে বললেন, সাবধানে থাকিস বাবা।
কলিম চলে গেল ঢাকায়। এ দিকে মা-বাবার চোখে ঘুম নেই। শুধু বলে চলেছেন, হাঁদারাম ছেলেটা কোথায় যেন কী করছে? আল্লাহ তুমি তার সহায় হও।
এমনিভাবে দুই দিন কেটে গেল। একটিবারের জন্যও ফোন করল না কলিম।
তৃতীয় দিন বিকেলে বাড়ির বাইরে ছোট ছোট ছেলেমেয়ের হট্টগোল। ‘কলিম ভাইয়ের বউ এসেছে! কলিম ভাইয়ের বউ এসেছে!!’ কলিমের বাবা হট্টগোল শুনে ঘর থেকে বের হতেই লম্বা-চওড়া, নাদুস-নুদুস দেড় হাত ঘোমটা দেয়া এক মহিলা তাকে পা ছুঁয়ে সালাম করতে এলো। কলিমের বাবা চোখে চড়কগাছ দেখছেন। তিনি ছোট্ট কয়েকটি লাফে পেছন সরে এসে বললেনÑ ওরে কলিম, কাকে কোথা থেকে নিয়ে এলি?
কলিম লাজুকলতার মতো চুপসে গেল। হঠাৎ কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলল, সে তোমার ছেলে মানে কলিমের একমাত্র বউ আম্মা।
ছেলের কথা শুনে মা ঘর থেকে বের হয়ে বললেনÑ ও কলিমরে, এ তুই কী করলি?
নতুন বউ এবার মা-কে সালাম করল। সালাম শেষে খপ করে দুই হাতে মায়ের ডান পায়ের হাঁটু বরাবর শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। বৃদ্ধ মা জবরদস্ত বউয়ের ঝাঁকুনিতে পড়ে যাচ্ছিলেন প্রায়। কোনো রকমে নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন, তুমি আমাকে সালাম করবে ভালো কথা, কিন্তু আমার হাঁটু জড়িয়ে ধরলে ক্যান?
নতুন বউ তার সুললিত কণ্ঠে বলল, আপনাদের না জানিয়ে আমরা বিয়ে করে ফেলেছি। আপনি আমাদের ক্ষমা করে দিন প্লিজ। বলেন, ক্ষমা করেছেন কি না?
মা এবার হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলেনÑ ও কলিমরে, ত্ইু এ কেমন করে করলিরে?
নতুন বউ বলল, মা আপনি যদি আমাদের ক্ষমা না করেন তাহলে হাঁটু ধরে এমন হেঁচকা একখান টান দিমু না, যেন চিৎ হয়ে পড়ে কোমরখানা মচকায়া যায়। পরে বুঝবেন মজা।
বউয়ের এমন উত্তেজিত ভাব দেখে কলিম বললÑ ওগো আমার ময়না, এমন কথা কয় না।
বলে বউকে ছাড়িয়ে আনল কলিম।
(এরপর দ্বিতীয় পর্ব)


আরো সংবাদ



premium cement